বিডি ক্রাইম নিউজ ডেস্ক ;
চাল চুরি বনাম অপরাজনীতি - ছাত্রনেতা রাজিবুল আহসান সুমন





চাল চুরি বনাম অপরাজনীতি-
বাংলাদেশে সংসদ সদস্য-৩৪৫ জন
সিটি মেয়র - ১২ জন
সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর- ৫০০ জন ( কম বেশি)
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান- ৬৪ জন
জেলা পরিষদ সদস্য- ৭৬৮ জন
উপজেলা চেয়ারম্যান- ৪৯৪ জন
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান - ১৪৮৬ জন
পৌর মেয়র -৩৩৩ জন
পৌর কাউন্সিলর- ৩৯৯৬ জন
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-৪৫৭১ জন
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য-৫৪,৮৫২ জন
সর্বমোট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি- ৬৭,৪২১ জন (কম বেশি)
বৈশ্বিক দূর্যোগ মহামারি করোনা সারা পৃথিবীকে লন্ডভন্ড করে চলেছে।প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।লক্ষ লক্ষ আক্রান্ত । প্রায় পুরো পৃথিবীর দেশে দেশে কোটি কোটি মানুষ ঘরে বন্দি । বাঁচার জন্য এর কোন বিকল্প এখনো নাই। কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাও কোটি কোটি মানুষ।
বিগত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী সনাক্তের পর থেকে সরকার একের পর এক তড়িৎ পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। মানুষকে ঘরে রেখে করোনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সরকারী- বেসরকারী অফিসে সাধারন ছুটি, গনপরিবহন বন্ধ সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। সেনা মোতায়ন করে মানুষকে ঘরে রাখার প্রানান্তর চেষ্টা চলছে। করোনা দুর্যোগ পরবর্তী অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা ৭৫,৭৫০ কোটি টাকার প্রনোধনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন। কৃষিতে ৯,০০০ কোটি টাকার ভুর্তকী সহ ৫০০০ কোটি টাকার স্বল্প সুদে ঋনের ঘোষনা দিয়েছেন। করোনা বিরোধী যুদ্ধের অগ্র সৈনিক ডাক্তার সহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য বীমা পাঁচ থেকে দশ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষনা দিয়েছেন।
আর একই সাথে দেশের কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের যাতে খাদ্য কষ্ট না হয় সেইজন্য দরিদ্র, কর্মহীন মানুষের ঘরে ও লোক লজ্জায় খাদ্যাভাবের কথা বলতে না পারা মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাদ্য পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে এক যোগে সারা বাংলাদেশে প্রশাসনের তত্বাবধানে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান- মেম্বারদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরন কার্যক্রম চলছে। সরকারী পর্যায়ে খাদ্য / ত্রান বিতরনের পাশাপাশি মানব সেবার ব্রতে মানবিক মুল্যবোধে তাড়িত হয়ে সারা বাংলাদেশে মন্ত্রী, এমপি, সিটি মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সামাজিক সংগঠন, বিত্তবান মানুষজন ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শত শত, হাজার হাজার মানুষ খাদ্য বিতরন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
করোনা দুর্যোগে পীড়িত, খাদ্যভাবে পতিত সারা দেশের লক্ষ কোটি মানুষের পাশে প্রতিদিন বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, আওয়ামীলীগ নেতা ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মী দিনরাত মানবিক মুল্যবোধে, নৈতিক চেতনায় আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকলেও পাশাপাশি কিছু হাতে গোনা নিচু মানসিকতার বেজন্মা, নর্দমার কীট এই দু:সময়ে চালের বস্তা চুরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব বেজন্মাদের নাই কোন লজ্জাবোধ, নাই কোন জাত-কুল । এদের পরিচয় শুধুই চোর। এরা সিঁদেল কাটা চোরের চেয়েও লক্ষ কোটি গুন অধম।
এবার আসি অন্য কথায়।
আচ্ছা বলুন তো, সারা বাংলাদেশে কতজন চেয়ারম্যান - মেম্বার চাল চুরি করেছে? হাতে গোনা কয়েকজন। ইতিমধ্যে তিনজন বরখাস্ত হয়েছে।
বিগত চার পাঁচ দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু চেনা লোক(কেউ মতলববাজ, কেউ আওয়ামী বিরোধী রাজনীতিক, কেউ অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা আবার কেউ হুযোগে বাঙ্গাল) , কিছু টিভি নিউজে এক-একজন চাল চোর চেয়ারম্যান-মেম্বারের কয়েক রকমের ছবি ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় পেষ্টিং করে আওয়ামীলীগ নেতা হিসাবে প্রচার করে চলেছেন। চুরি করা চাল টন বা বস্তার হিসাবে সংখ্যায় কম হলে কেজি বা গ্রাম হিসাব করে সংখ্যা লিখে চাল চুরির তথ্য লিখছেন। ফেইসবুক খুললেই মনে হয়, সারা বাংলাদেশে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ সকলেই শুধু চাল চুরি করছে। আচ্ছা ফেইসবুকের সেসব বন্ধুরা, বলুন তো উপরে দেখানো হিসাবের প্রায় ৬৮,০০০ জনপ্রতিনিধির মধ্যে কতজন বর্তমান সময়ে ত্রানের চাল চুরিতে ব্যস্ত ? আর কতজন নিরলসভাবে রাতদিন অভুক্ত মানুষের দোর গোড়ায় সরকারী বা ব্যক্তিগত সাহায্য পৌঁছানোর কাজ করে চলেছেন ? বলুন তো, করোনা দুর্য়োগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এতো গুলো পদক্ষেপের কোনটাই আপনার চোখে ভাল না ? তড়িৎ নেওয়া এতোগুলো সিদ্ধান্তের কোনটিকে আপনি সাধুবাদ জানিয়ে আপনার ফেইসবুক অথবা টুইটারে একটা পোষ্ট দিয়েছেন ? টানা এক মাস ধরে সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা রাতদিন পরিশ্রম করছে , সারাদেশে হ্যান্ড স্যানেটাইজার বিতরন ও মাথায় চাল-ডালের বস্তা নিয়ে বাড়ী বাড়ী খাদ্য বিতরন করছে । তাদের সাধুবাদ দিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছেন কি ? না দেন নি। কারন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি নেগেটিভ।
প্রত্যেক সমাজে ভাল ও খারাপ মানুষ রয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোন সমাজ, কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন রাজনৈতিক দল খোঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে দুষ্ট চরিত্রের মানুষ নাই। হ্যাঁ, সংখ্যার বিচারে যদি দুষ্ট-নীতিহীনরা বেশী হয়, আর যদি ঐ দুষ্ট নীতিহীনদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আনুকুল্য দেয়া হয় তবে অবশ্যই সমালোচনা করবেন। চরম বিরোধিতা করবেন। চাল চোর চেয়ারম্যান - মেম্বারের প্রাতিস্ঠানিক পরিচয় চেয়ারম্যান অথবা মেম্বার। আওয়ামীগ নেতা নয়। ধরে নিলাম, আওয়ামীলীগ করার কারনেই তার পরিচয়টা এভাবে দিচ্ছেন। সারা বাংলাদেশে ৬৮০০০ জনপ্রতিনিধির মধ্যে এই চোর কত পার্সেন্ট ? হাজার লক্ষ আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত আওয়ামীলীগের তুলনায় এই চোর আওয়ামীলীগ কত পার্সেন্ট ?
আরে ভাই, আওয়ামীলীগকে সহ্য করতে পারেন না, শেখ হাসিনার গোষ্টি শুদ্দা গালি দেন, তাও ঠিক আছে । কই শেখ হাসিনা ও তার কর্মীরা আর কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান- বিত্তবান মানুষ ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দলের কোন নেতাকে তো চোখে অনুবীক্ষণ অথবা দূরবীন লাগিয়েও দেখা যায়না। এক নোবেল বিজয়ী তো আমেরিকার নির্বাচনে কোটি ডলার তহবিল প্রদান করেন। কিন্তু দেশের মানুষের দুর্দিন তাঁর দেখা মেলে না।
তাই বলছি, অন্যের ছিদ্র অন্বেষন না করে নিজেরা কিছু করেন। মানুষ ভাতের অভাবে দিন কাটাচ্ছে। দুই একটা নষ্ট কীট, বেজন্মা চোরের পিছেনে সময় নষ্ট না করে মানুষের পাশে দাঁড়ালে দায় মোছন হবে। নষ্ট কীটদের শায়েস্তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর তার প্রশাসনই যথেষ্ট। করোনা দুর্যোগে অপরাজনীতির অবসান করে নিরাপদ সামাজিক দুরুত্ব মেনে দেশ জাতির কল্যানে আত্মনিয়োগ করুন যার যার সাধ্য মতো।
বিবেকবান হউন।
ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।